ফলই মাহ্চ সিক্যা

ফলই মাহ্চ সিক্যা

উপকরণ: 

ফলি মাছ, তেল, হলুদ, ও লবণ।

 

রন্ধন প্রনালী:

ফলই মাহ্চ (ফলি মাছ) এর ভেতর বাহির পরিষ্কার করে হলুদ, লবণ ও সামান্য তেল মাখিয়ে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এরপর লোহার শিক বা শক্ত কোন কাঠিতে গেঁথে আগুনের শিখা বিহীন জ্বলন্ত কাঠ-কয়লার আঁচে (দুই তিন ইঞ্চি উপরে) সময় নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেঁকতে হবে সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত।

 

চাকমারা বিশ্বাস করে ফলি মাছ হল নিরোগী মাছ এবং এর ঔষধি গুনাগুন অনেক। অসুস্থতায় বা আরোগ্য লাভের পর ফলি মাছ খাওয়ার প্রচলন দীর্ঘদিনের।

 

স্মৃতি:

এস.এস.সি. পর্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছি। বিশাল একটা খালি জায়গা ছিল তখন কাপ্তাই লেকে এবং মাছ পাওয়া যেতো প্রচুর। একটা বড়শি ফেললেই তাতে মাছ উঠে আসতো। এবং খুবই সুস্বাদু। আবার চৈত্রের প্রখর রোদে কচুরিপানা হালকা করে উঠালে দেখা যেত মাছ শুয়ে আছে, তার কোন খেয়াল নেই, সহজেই ধরে ফেলা যেতো।

এত মাছ ছিল। গ্রীষ্মে লেক শুকিয়ে আসলে খালি জায়গাগুলোতে আমরা- ছেলেপেলেরা খেলতাম। কোথাও কোথাও সামান্য পানি জমে থাকতো আমরা তখন ওর ভেতরে মাছ ধরতাম। মাছগুলো ধরে পরিষ্কার করে আগুনে পুড়িয়ে খেতাম। শুধুমাত্র লবণ আর হলুদ মাখিয়ে লাকড়ির আগুনের তাপে সেঁকে খেতাম। অনেকটা এখনকার বারবিকিউ করার মত আমরা বলতাম সিক্যা। খুবই সুস্বাদু। বহু আগে থেকেই এভাবে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। আমাদের সময় কেউ অসুস্থ হলে- জ্বর-টর হলে ফলি মাছের সিক্যা খাওয়াতো। অসুস্থ হলে তখন হয়তো মসলা খেলে তার ক্ষতি হবে বা খেতে ভালো লাগে না এমন কারণেও হতে পারে। তখন মাছের সিক্যা দিয়ে ভাত খেতে দিত। তবে অন্য কোন মাছ নয়, শুধুমাত্র ফলি মাছ। আমরা বলি ফলোই মাছ। ফলোই মাছ বা ফলি মাছ কে নিরোগী মাছ বলা হয়। অর্থাৎ এ মাছে কোন রোগ নাই।

 

শুভ্র জ্যোতি চাকমা, রিসার্চ অফিসার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি।